Product details
সোনালী মুরগী পালন সম্পর্কে বিস্তারিত অনেকেই জানতে চেয়েছেন। আজকে সোনালী মুরগী পালন নিয়ে Shuhorab Hossain Dvm ভাইয়ের সুন্দর বিশ্লেষন মুলক লেখা থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ্...
সোনালি মুরগির ঘর,ব্যবস্তাপনা( টিকা,মেডিসিন,খাবার,লিটার,পরদা,ব্রুডিং),ওজন,বাচ্চার দাম, রোগব্যাধি,লাভ লস,কেন লাভ বা লস হয়.বিস্তারিত:)
১০০০ মুরগির জন্য:
পুরব – পশ্চিম লম্বা হবে
দৈঘ্য ৪০ফুট*প্রস্ত ২০ফুট:৮০০ বর্গফুট
বা ৪৫*১৭:৭৬৫ বা ৩৫*২২:৭৯২
(৭৫০-৮০০)।এভাবে নিজের মত করে মিলিয়ে বানাতে হবে,তবে দৈঘ্য ২৫ ফুটের বেশি ভালনা,লম্বা যা খুশি করা যায়.
উচ্চতা ৮-৯ ফুট ভাল তবে অধিকাংশ ৭-৮ ফুট,ফ্লোর পাকা ভাল কিন্তু কাচা হলে ইটের খোয়া এবং বালি, তারপর এটেল মাটি দিয়ে লেপে দিতে হবে. শুধু কাচা হলেও চলে.
ঘর তৈরির খরচ:
বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন খরচ করে ফারম করা যায়.আমি আমার হিসেব দিচ্ছি.
পিলার ১৬ টি ১৬০০০
কাঠ। ২০০০০
টিন। ২০০০০
পরদা ৩০০০
মিস্ত্রি ৭০০০
নেট। ১০০০০
পাত্র,ব্রডার। ৮০০০
মাটি কাটা ১০০০০
ইলেক্ট্রিকেল। ৪০০০
সিলিং ২০০০
সাইড ওয়াল ১০০০০
টোটাল:১১০০০০টাকা
১০০০ সোনালি মুরগি পালতে
খাবার লাগবে ৪০ ব্যাগ*১৯০০:৭৬০০০
বাচ্চা১০০০*৩০। ৩০০০০
মেডিসিন। ৭০০০
টিকা ২০০০
বিদ্যুৎ। ২০০০
লিটার। ৪০০০
কর্মচারী ১০০০০
টোটাল। ১৩১০০০টাকা
৬০ দিন পর ৮০০ গ্রাম করে ১০০০-৫০ :৯৫০ টির ওজন ৭৬০ কেজি * ১৮০ টাকা দরে:১৩৬৮০০টাকা( ৫০ টা মৃত ধরে)
তাহলে লাভ:১৩৬৮০০-১৩১০০০:৫৮০০
যদি এমন হয়
কর্মচারী ছাড়া ১০০০০ টাকা সেভ হবে
খাবার নগদ। হলে ৪০০০ (বস্তা প্রতি ১০০ টাকা কম লাগবে.)
লাভ নির্ভর করে বাচ্চার দাম,রেডি মুরগির দাম,ওজন বেশি আসার উপর মানে ৮৫০(৪৭ কেজি * ১৮০:৮৫০০টাকা গ্রাম, এবং ওষধ খরচ কমানোর উপর(৩০০০)
মুরগি যদি ৩০ টা কম মরে তাহলে ৩০*৮০০:২৪*১৮০: ৪৩২০ টাকা
বাচ্চার দাম যদি ৫ টাকা কম হয়২৫ টাকা হয় তাহলে ৫০০০ টাকা
সবকিছু ঠিক থাকলে লাভ হবে:৫৮০০+১০০০০+৪০০০+৮৫০০+৩০০০+৪০০০+৫০০০:৪০৩০০ টাকা
তাছাড়া রেডি মুরগির দাম যদি আরো ১০ টাকা বেশি হয় তাহলে লাভ বেশি হবে.
আবার সমস্যা হলে ৫০০০০ টাকা লসও হতে পারে তাই সবকিছু মাথায় রেখে ব্যবসা শুরু করা উচিত.
তবে সঠিকভাবে পরিচালনা করলে লাভ বেশি না হলেও লস হবেনা( আল্লাহ যদি চায়)
টিকা:
১-৫ দিন। আই বি + এন ডি
৮-১২ দিন। গামবোরু
২০-২২ দিন। গামবোরু
২৫-২৭ দিন। রানিক্ষেত
খাবার পাত্র:১-৭ দিন ১০০টির জন্য ১ টি
পানির পাত্র ১০০টির জন্য ১ টি
প্রথম ১-২ দিন পেপারে খাবার দিতে হবে যাতে খাবার চিনতে পারে
৩০ দিন পর্যন্ত ৪০ টির জন্য ১ টি খাবার পাত্র এবং ৫০ টার জন্য ১ টি পানির পাত্র
৩০ দিন পর ৩০ টির জন্য ১ টি খাবার পাত্র
এবং ৪০ টির জন্য ১ টি পানির পাত্র.
খাবার এবং পানির পাত্র কিছু কম বেশি হতে পারে তবে বেশি দেয়াই ভাল বিশেষ করে বাচ্চা অবস্তায়.
ব্রুডিং:
বাচ্চা আসার আগে ঘরের তাপমাত্রা ৯৫’ ফারেনহাইট বা ৩৩’ সেন্টিগ্রেট করতে যা করার তাই করতে হবে.(স্টোভ,কাঠের গড়ি দিয়ে তাপ, বালব,হারিকেন,কয়লা, হিটার,গ্যাস ব্রুডার)
আলাদা ব্রুডিং ঘর হলে ভাল হয় কারন গঠনগতভাবে ব্রুডিং ঘর আলাদা, সেখানে সাইড ওয়াল,পরদা নিচ হতে উপর পরযন্ত থাকে. তাছাড়া দুটি ব্যাচ পালা যায়.
ব্রুডিং এর তাপমাত্রা
১ ম সপ্তাহে ৯৫’ ফারেনহাইট
২ য় সপ্তাহে ৯০
৩ য় সপ্তাহে ৮৫
৪ থ সপ্তাহে ৮০
৫ ম থেকে শেষ পর্যন্ত ৭৫ ‘ ফারেনহাইট
লিটার এবং রোগ
শীতের সময় লিটার ৩ ইঞ্চি এবং গরমের সময় ২ ইঞ্চি করে দিলে ভাল হয় কারন লিটার পাতলা হলে বাচ্চার শরীরের তাপ বের হয়ে লিটারে চলে যায়.
লিটার ভিজা হলে আমাশয় হয়, আমাশয় হলে গামবূরু এবং রানিক্ষত হবার সম্বাবনা থাকে.
লিটার বেশি শুকনা হলে স্পে করে দিতে হবে কারন ধুলা বালি নাকে গিয়ে মুরগির ঠান্ডা লাগে,বিশেষ করে বাচ্চার ব্রুডার নিউমোনিয়া হবার সম্বাবনা থাকে.
খাবার এবং পানির পাত্র ও রোগ
খাবার পাত্র দিতে হবে পিঠ বরাবর আর পানির পাত্র দিতে হবে চোখ বরাবর তাহলে মুরগি সহজে খেতে পারবে এবং পানি ও খাবারে ময়লা পড়বে কম ফলে পানি বাহিত রোগ কমে হবে, পেঠ ভাল থাকবে. পাতলা পায়খানা হবেনা ওজন ভাল হবে.
লিটার যদি খাবার এবং পানিতে পড়ে তাহলে আমাশয় হয় যা সব রোগকে দাওয়াত করে নিয়ে আসে.
প্রতিদিন পানির পাত্র পরিস্কার করতে হবে এবং সপ্তাহে ১ বার খাবার পাত্র পরিস্কার করতে হবে.
মুরগির অধিকাংশ রোগ পানির মাধ্যমে আসে.
পরদা এবং রোগ:
পরদার নিচের অংশ ফিক্স থাকবে এবং উপর হতে নিচে নামানো হবে,অথবা উপরে চটের অংশ এবং নিচে কাপড়ের অংশ থাকা উচিত যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী উঠানো নামানো যায়.
শীতের সময় দরজায় এবং পরদার উপরের অংশ ঢেকে দিতে হয়.
পরদা উপরে ফিক্স থাকলে সঠিকভাবে উঠানো নামানো যায়না ফলে ভিতরে গ্যাস হয়,গ্যাস হলে ধকল পড়ে এবং শাসনালির ক্ষতি করে ফলে মাওকোপ্লাজমা,ব্রংকাইটিস এবং রানিক্ষেত হতে পারে.
খাবার এবং পানি:
খাবার হিসেবে সোনালি খাবার এবং ব্রয়লার খাবার দুটিই চলে,অনেকে ১৫-২০ দিন ব্রয়লার খাওয়ায় তারপর সোনালি,কেউ আবার দুইটা মিক্সার করে খাওয়ায়. কেউ শুধু সোনালি বা শুধু ব্রয়লার খাওয়ায়.
শুধু ব্রয়লার খাওয়ালে আমাশয় হওয়ার সম্বাবনা থাকে কারন এতে প্রোটিন এবং অন্য ভিটামিন বেশি থাকে.
সোনালি মুরগি ব্রয়লারের মত বাড়েনা,তাই তাদের খাবারটাও সেভাবে তৈরি করা হয়েছে মানে প্রোটিন কম দেয়া আছে.
১ ম ২ দিন ৪ ঘন্টা পর পর খাবার দেয়া উচিত এবং খাবার যাতে সব সময় থাকে তানাহলে মুরগি ছোট বড় হয়ে যাবে.
৩-১০ দিন দিনে ৪ বার খাবার দিতে হবে এবং ১১ দিন থেকে দিনে ৩ বার খাবার.
৩০ দিন পর দিনে ২ বেলাও দেয়া যায়.
20-25 দিন যতটুকু খায় ততটুকু খাবার কিন্তু ২৫ দিন পর প্রতি সপ্তাহে ৪-৬ গ্রাম করে বাড়াতে হবে,বেশি দিলে লাভ নেই,
গরমের সময় ঠান্ডা সময় মানে সকালে এবং বিকালে খাবার দিতে হবে.
কতদিনে কত ওজন:
৪৫ -৬০ দিনে ৭০০-৯০০ গ্রাম পর্যন্ত হয় আর খাবার খাবে ১০০০ মুরগিতে ৩৫-৪০ ব্যাগ.ওজন অনেকটা বাচ্চার মানের উপর নির্ভর করে. ইন ব্রিডিং সমস্যার কারনে প্রায়ই বাচ্চার মান ভাল হয়না.
বাচ্চার দাম এবং রেডি মুরগির দাম:
রেট ২২-৩০ টাকা, রেট উঠানামা করে,
রেডি মুরগির দাম ও উঠানামা করে ১৫০-২১০ টাকা তাই লাভ টা ও উঠানামা করে.
খাবারের দাম বাকিতে ১৯৫০-১৮০০ টাকা,নগদে ১৭৫০-১৯০০ টাকা
ব্রয়লার খাবার দিলে ওজন টা তাড়াতাড়ি আসে.
রোগব্যাধি :
প্রধান রোগ হল আমাশয়,গামবোরু,রানিক্ষেত.
তাছাড়া মাইকোপ্লাজমা এবং ব্রংকাইটিস
মেডিসিন:
আমাশয় বেশি হয় তাই
১৩-১৫দিনে
২৩-২৫ দিনে
৩৫-৩৭দিনে মোট তিন বার আমাশয়ের ডোজ করা উচিত.
৩৫-৪০ দিনে কৃমির ডোজ করলে ভাল হয়,
অনেক সময় ঠোটে ছেকা দিতে হয় ৫-১২ দিনে.
ব্রুডিং এর সময় প্রথম দিন প্রবায়োটিক সি এবং গ্লোকোজ দেয়া যায় ,পরের দিন থেকে লাগলে এন্টিবায়োটক দেয়া যায়.
প্রতি সপ্তাহ ২ দিন করে প্রবায়োটিক দিলে ভাল হয় এতে পায়খানা ভাল থাকবে.
কেন লাভ হয়না কারন
১রেডি মুরগির দাম উঠানামা করে
২.ওজন কম আসা
৩ মুরগির ঘর সঠিকভাবে করা হয়না
৪.পালন সম্পর্কিত সঠিক ধারনা না থাকা
৫.রোগ বালাই
৬.বায়োসিকিউরিটি না থাকা
৭..বাচ্চা ভাল মানের না হওয়া
৮.টিকার মান এবং দেয়ার পদ্ধতি ভাল না হওয়া
৯..বাচ্চার দাম বেশি
১০. খাবারের দাম বেশি
১১.মুক্ত বাজারনীতি মানে দামের উপর সরকারের কোন নীতিমালা নেই.
১২. দেশে কতগুলো ফারম আছে,কতগুলো বাচ্চা উৎপাদিত হয় এবং আমাদের চাহিদা কতটুকু তার কোন সঠিক হিসেব নেই ও সে অনুযায়ী কোন ব্যবস্তা নেই.
তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সঠিকভাবে পালন করতে পারলে লস হবেনা হয়ত কম লাভ হবে কিন্তু বাংলাদেশে দক্ষ লোক এবং ভাল পরিবেশ ও পরিচালনা কঠিন।